Spread the love
ছড়া, সাহিত্যের সবচেয়ে আদি মাধ্যম। নানাকালে ছড়াকে বিভিন্ন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। বিশ্বসাহিত্য তথা বাংলা সাহিত্যেও ছড়ার বৈচিত্র্য সময়ে সময়ে সাহিত্যের ভুবনকে রঙিন করেছে।
ছড়া নিয়ে আপামর পাঠকের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও অনেকেই ছড়াকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দিতে কুন্ঠাবোধ করেন। কেউ কেউ ছড়ার পাশাপাশি সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় বিচরণ করলেও অনেকেই শুধু ছড়া নিয়েই সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল হয়ে আছেন।
বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ার ছন্দ নিয়ে অনেকেই আলোচনা করেন। এতে নতুন ছড়াকাররা উপকৃত হন, সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু পর্ব,মাত্রা, অন্ত্যমিল, গঠন ঠিক থাকলেই সব লেখা ছড়া হয়ে ওঠে না। ছড়ার অন্তর্নিহিত বক্তব্য ও তার প্রকাশ একটি ছন্দময় কাঠামোকে ছড়ায় রূপ দিতে পারে।
গতানুগতিক ঢঙে যেভাবে একটি সার্থক ছড়া লেখা যায় একইভাবে বিশ্বসাহিত্যের ভান্ডার থেকেও নতুন নতুন ছড়ার ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়া, ছড়াকারের উদ্ভাবনী ক্ষমতায় ছড়া হয়ে ওঠে আরও নতুন, আরও সৃষ্টিশীল।
ছড়া, সাহিত্যের মাঠে সবচেয়ে দুরন্ত খেলোয়াড় । আগামীতে ছড়া নিয়ে আমার মতো করে কিছু লেখার আশা রাখছি। জয় হোক ছড়ার, জয় হোক সাহিত্যের।
পর্ব -২
ছড়া নিয়ে কোনো তাত্ত্বিক আলোচনা এটি নয়। ছড়ার ছন্দ নিয়ে এই আলোচনায় হয়ত খুব বেশি জায়গা থাকবে না। আমরা ছড়ার ছন্দ সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থ এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে অবগত হতে পারি।
একটা বিষয় পরিস্কার যে, ছড়ার সাহিত্যমূল্য যত গভীর আর প্রাচীনই হোক না কেন ; এখন পর্যন্ত ছড়া- সাহিত্যের অন্য শাখাগুলোর বিচারে কুলীন নয়। তারা মনে করেন ছড়া সাহিত্যের ছোট ভাই, সেটি- চর্যাপদ ছড়ার বৈশিষ্ট্য নিয়ে যতই স্বাক্ষ্য দিক কিংবা রবীন্দ্র-নজরুল-সুকুমারের সৃষ্টি এবং আরও প্রণিধানযোগ্য ছড়াকীর্তি থাকার পরেও । যুগে যুগে বাংলা সাহিত্যে বহু নমস্য ছড়াকার সাহিত্যাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু ‘ছড়াকার’ হিসেবে সেই নমস্যরাও ‘বড়দের সাহিত্য’ নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন না ।
আমরা ভাবগম্ভীরতায় লিটলম্যাগ অথবা সাহিত্য সংকলনকে সাহিত্য প্রকাশের যথাযথ জায়গা মনে করলেও অন্যান্য মাধ্যমের গুরুত্ব অস্বীকার করতে পারি না । যে কারণে সাহিত্যের বাণিজ্যিক পত্রিকা ও দৈনিকের সাহিত্য সাময়িকীগুলো লেখকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। কিন্তু দৈনিকের শিশুপাতা ছাড়া ছড়ার স্থান আর কোথাও হয় না। যদিও ইদানিং সমকালীন ছড়া কিছু দৈনিকে প্রায় প্রতিদিন প্রকাশিত হয়ে থাকে। একেবারে ব্যতিক্রম ছাড়া সাহিত্য পত্রিকা অধবা দৈনিকের সাময়িকীতে ছড়া অনুপস্থিত থাকে। কিন্তু সাহিত্যের একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে ছড়ার অনুপস্থিতি মর্মযাতনার বিষয় বৈকি।
ছড়া শুধু ছোটদের জন্য লেখা হয় না। ছড়ার বৈচিত্র্য বহুমুখী। বড়োদের জন্যও বিভিন্ন আঙ্গিকে দেদার ছড়া লেখা হচ্ছে। কিন্তু, কৌলিন্যের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের কারণে বড়োদের জন্য প্রকাশিত সাহিত্যমাধ্যমে ছড়া অনুপস্থিত। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন পাঠক, অনেক ক্ষেত্রেই আগ্রহ হারাচ্ছেন ছড়াকার।
পাঠকের মনোজগতে ঝংকার তুলতে ছড়ার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহের কোনো জায়গা নেই। প্রখ্যাত ছড়াকার অন্নদাশঙ্কর রায়ের মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত একটি চমৎকার ক্লেরিহিউর উদ্ধৃতি দিয়ে আজকের মতো শেষ করছি —
‘মিস্টার জাসটিস সেন
রায় যত উলটিয়ে দেন
ছোট ছোট জাজ তাই দেখে
রায় ছেড়ে ক্লেরিহিউ লেখে।’
পর্ব-৩
বস্তুতঃ ছন্দ ছাড়া কোনও কাব্য হয় না। ছড়া-কবিতা-গান লিখতে গেলেই ছন্দ অনস্বীকার্য। কিন্তু বহুদিন ধরেই গান ব্যতীত ছন্দময় অন্ত্যমিলসমৃদ্ধ কাব্যকাঠামো পেলেই অনেকে ছড়া বলে চালিয়ে দিতে চান। অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, কবিতা হবে ছন্দ-অন্ত্যমিলবিহীন। আবার গদ্যকবিতার নামে নিরেট গদ্যাংশই কবিতা হিসেবে স্থান করে নিচ্ছে কি-না সেটি অবশ্যই গবেষণার দাবি রাখে। কারণ, গদ্যকবিতার নামে ছন্দবিহীন গদ্যাংশ কতটুকু কবিতা তা নিয়ে সমঝদার পাঠকও সন্দিহান হন।
কবিতা লিখতে গেলে ছন্দ অনস্বীকার্য। অন্ত্যমিলহীন গদ্যকবিতাও ছন্দ মেনে চলে। জীবনানন্দ দাশ কিংবা শামসুর রাহমানের কবিতায় ছন্দের সফল প্রয়োগ দেখা যায়। কিন্তু ছন্দহীন যেসব গদ্যের অপভ্রংশ কবিতা নাম নিতে চায় সেগুলো প্রশ্নের অবতারণা করবেই।
একইভাবে অনেকে অন্ত্যমিলসমৃদ্ধ পদ্য বা কবিতা লিখে সেটিকে ছড়া বলে দাবি করেন। মূলত ছন্দের রীতি মেনে অন্ত্যমিল দিয়ে পদ্য বা কবিতা লিখলেই সেটি ছড়া হয়ে যায় না। কারণ, ছড়ার নিজস্ব একটি মেজাজ রয়েছে। দুলাইনেই যে রকম একটি সফল ছড়া লেখা যায় তেমনি চব্বিশ লাইনেও ছড়া তার ঝংকার তুলতে পারে। আগে ছড়াকে ঘুমপাড়ানি মনে করা হলেও আধুনিক যুগে ছড়া ঘুমতাড়ানি এক বলিষ্ঠ ছন্দকাঠামো।
ছড়া চটুল হতেই হবে এটি যেমন সত্যি, টগবগানো ঘোড়ার খুঁড়ের তালের মতো ছড়া তেমন তেজস্বী। প্রচলিত ধারণায় ছড়া কোনও স্বচ্ছ বার্তা বহন করে না, জটিল কোনও ধাঁ ধাঁ রেখে যায় না ; এই কথার সাথে আমি একমত নই। ছড়া সমাজ, মানুষ তথা সর্বস্তরের বার্তা বহন করে বলেই আমি মনে করি। ছড়া দৃশ্যকল্প পছন্দ করে না, রূপক ব্যবহারে ছড়ার অভিরুচি নেই ; ছড়া সরাসরি বলতে পছন্দ করে। ছড়া ঠোঁটকাটা সাহিত্যমাধ্যম।
জীবনানন্দ পরবর্তী সময়ে আধুনিক বাংলা কবিতায় বৈচিত্র্য খুবই কম যুক্ত হয়েছে। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে ছড়ার জগত বহুমাত্রিক নিরীক্ষা ও সংযোজনে সমৃদ্ধ হয়েছে। ছড়া এখন অনেক বৈচিত্র্যে লেখা হয়। ছড়া শিশুদের গন্ডি ছাড়িয়ে পূর্ণবয়স্ক পাঠকদের ছন্দসুধায় আপ্লুত করছে। আমরা স্যাটায়ারের পাশাপাশি নিয়মিত প্রেমের ছড়া, দ্রোহের ছড়া, তীর্যক ছড়া, সমকালীন ছড়া, ছড়াগল্প, শিশুতোষ ছড়া ইত্যাদি পাচ্ছি। বহুকাল ধরে চলে আসা ছড়ার অন্যান্য শ্রেণিগুলোও নিয়মিত চর্চা হচ্ছে। গত পঞ্চাশ বছরের বাংলাসাহিত্যে ছড়া নতুন নতুন আবিস্কারে অবশ্যই বাতিঘরের কাজ করেছে।
যে কথা বলছিলাম, ছন্দ ছাড়া ছড়া-কবিতা কিছুই লেখা সম্ভব নয়। বাংলা ছড়া-কবিতার ছন্দ প্রধানত তিনটি, যথা-স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত। মূলত এই তিন শ্রেণির ছন্দের প্রকৃতিগত পার্থক্য নির্ভর করে অক্ষর বা সিলেবল এর মাত্রা গণনার রীতির উপর।
বাংলা ছড়া বহুলভাবে স্বরবৃত্ত ছন্দে লিখিত হয়, এছাড়াও ছড়াচর্চায় মাত্রাবৃত্ত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু আঙ্গিকগত কারণে অক্ষরবৃত্তে ছড়াচর্চা খুবই বিরল। কবিতা লিখতে গেলেও এই তিনটি ছন্দের মধ্যেই বেছে নিতে হবে। অন্ত্যমিলবিহীন গদ্য কবিতাও ডাস্টার ব্যবহার পছন্দ করে না।
পর্ব-৪
যেহেতু, আগেই উল্লেখ করেছি এই আলোচনায় ছড়া/কবিতার ছন্দ নিয়ে খুব বিশদ আলোচনার উদ্দেশ্য নেই তথাপি নতুনদের জন্য সংক্ষেপে ছন্দ নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করছি ।
প্রাথমিকভাবে ছন্দ চিনতে হলে ধ্বনি, অক্ষর ( মুক্তাক্ষর, বদ্ধাক্ষর ), মাত্রা, যতি, চরণ, পর্ব, অতিপর্ব ইত্যাদি জানতে হবে । এগুলো একেক ছন্দে একেকভাবে ব্যবহৃত হয় । আর এদের সুষ্ঠু ব্যবহারই ছড়া/কবিতাকে করে তোলে সার্থক ও পাঠমধুর ।স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রকৃতিগত পার্থক্য নির্ভর করে অক্ষর বা সিলেবল এর মাত্রা গণনার রীতির উপর । তাই মাত্রা গুনেই ছন্দের সিদ্ধান্তে আসতে হয় । উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হলে ছন্দের ধারণা সহজে পাওয়া যেতে পারে । তাহলে সেগুলো নিয়ে সংক্ষেপে অবগত হওয়া যাক ।
• ধ্বনি
ধ্বনি দুই প্রকার । যথা- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি ।
স্বরধ্বনি সব সময়ই মুক্ত । অঅঅঅ বা আআআআআ বা ইইইইই এই সবগুলোই যতক্ষন ইচ্ছা টেনে রাখা যায় । এরা স্বাধীন ।
কিন্তু ব্যঞ্জনধ্বনি স্বাধীন নয় । ব্যঞ্জনধ্বনি, স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না । ”ম” বলতে গেলে অ যোগ করতেই হয় ।
• অক্ষর
অক্ষর – এক প্রয়াসে উচ্চারিত ধ্বনি সমষ্টির নাম অক্ষর তথা Syllable । অক্ষর দুই ধরনের- যথা- মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর ।
যে সমস্ত অক্ষর বা শব্দাংশ উচ্চারণ কালে আটকে যায় না বা প্রয়োজনে প্রলম্বিত করা যায় ও ইচ্ছেমত টেনে পড়া যায় তাকে মুক্তাক্ষর বলে । যেমন- কে/সু/চ/হা ইত্যাদি ।
যখন কোনো অক্ষর বা শব্দাংশ উচ্চারণে স্বরবর্ণের সাহায্য না পেয়ে থেমে যেতে হয় তখন হয় সেটাই বদ্ধ শব্দাংশ। যেমন- হাত্ / থাক্ /ফুল্ ইত্যাদি ।
• মাত্রা
বাংলা ছড়া/কবিতার ছন্দে ব্যবহৃত একটি শব্দাংশ বা অক্ষর উচ্চারণের সর্বনিম্ন কাল পরিমাণকে মাত্রা বলে ।
বাংলা তিন শ্রেণির ছন্দেই মুক্তাক্ষর সাধারণত একমাত্রা গণনা করা হয় । তাই ছন্দ নির্ণয়ের জন্যে মুক্তাক্ষর বা মুক্ত শব্দাংশ কোনো ভাবেই প্রভাব বিস্তার করে না ।
বদ্ধাক্ষর, স্বরবৃত্ত ছন্দে সাধারণত একমাত্রা, মাত্রাবৃত্ত ছন্দে সাধারণত দুইমাত্রা এবং অক্ষরবৃত্ত ছন্দে আদি ও মধ্যে একমাত্রা এবং শেষে দুইমাত্রা ।
তাই বলা যায় ছন্দের হেরফের ঘটে বদ্ধাক্ষর বা বদ্ধ শব্দাংশ নিয়ে । অর্থাৎ বদ্ধ শব্দাংশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মাত্রা হবার কারণেই ছন্দের তারতম্য ঘটে । একটি শব্দ নিয়ে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা যেতে পারে , যেমন- অঙ্কুর । এই শব্দটিতে দুটি বদ্ধাক্ষর আছে, যথা- অঙ্ . কুর্ । অতএব, ছন্দের প্রকৃতি অনুসারে অঙ্কুর শব্দটি স্বরবৃত্ত হলে দুমাত্রা, মাত্রাবৃত্ত হলে চারমাত্রা এবং অক্ষরবৃত্ত হলে তিনমাত্রা ।
পর্ব-৫
• যতি
ছড়া/কবিতা পড়বার সময় স্বাভাবিক ভাবে বাক্যের মাঝে কিছু জায়গায় হালকা সময়ের জন্য আমাদের থামতে হয়, এই থামা বা বিরতিকে ‘যতি’ বলে । যতি দুই প্রকার : দীর্ঘ যতি ও হ্রস্ব যতি । অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয় । আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয় । যেমন-
আয়রে ভোলা । খেয়াল খোলা ।।
স্বপনদোল । নাচিয়ে আয়।। (সুকুমার রায় )
এখানে ∣ – হ্রস্ব যতি ও ∣∣ – দীর্ঘ যতি
• পংক্তি এবং চরণ
কবিতার একেকটি লাইনকে সাধারণত পংক্তি বলা যায় ।কখনো কখনো দুই বা ততোধিক লাইন বা পংক্তি দিয়ে চরণ সাজানো হয়ে থাকে । যেমন-
ঢাকার পথে চলতে হলে
সারা বছর ধরুন ছাতা,
ওপরতলার ময়লা পানি
কিংবা কাকের কাণ্ড যা-তা । ( সুকুমার বড়ুয়া )
এখানে, লাইন চারটি কিন্তু চরণ দুটি ।
• পর্ব, অপূর্ণ পর্ব ও অতি পর্ব বা উপপর্ব
কবিতার প্রতিটি লাইনে সমমাত্রার অংশগুলোই হলো পর্ব। পংক্তি শেষের পর্বাংশকে অপূর্ণ পর্ব বলা হয়, যার মাত্রা সংখ্যা পর্বের মাত্রা সংখ্যা থেকে সর্বদাই কম। এ ধরনের পর্বাংশ লাইনের শুরুতে থাকলে তাকে অতিপর্ব বা উপপর্ব বলে । যেমন-
গান জুড়েছেন/গ্রীষ্মকালে/ভীষ্মলোচন/শর্মা ।
আওয়াজখানা/দিচ্ছে হানা/দিল্লী থেকে/বর্মা ! ( সুকুমার রায় )
এখানে তিনটি পর্বের শেষে একটি করে অপূর্ণ পর্ব রয়েছে ।
আবার,
আমি/যুগে যুগে আসি,/আসিয়াছি পুন/মহাবিপ্লব/হেতু (কাজী নজরুল ইসলাম )
এখানে ‘আমি’ অতিপর্ব বা উপপর্ব ।
• শ্বাসাঘাত
অনেক সময়ই ছড়া/কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত জোর দিয়ে পাঠ করা বা আবৃত্তি করাকেই বলা হয় শ্বাসাঘাত । যেমন-অনেক ক’রে/বাসতে ভালো/পারিনি মা/তখন যারে,
আজ অবেলায়/তারেই মনে/পড়ছে কেন/বারে বারে।। ( কাজী নজরুল ইসলাম )
এখানে প্রতিটি পর্বের প্রথম অক্ষরই একটু জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই জোরকেই শ্বাসাঘাত বলে।
এতক্ষণ আমরা ছন্দের নিয়ামক বিষয়গুলো সংক্ষেপে জেনে নিলাম । মূলত আলোচিত নিয়ামকগুলোই ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে । এবার ছন্দের আলাপে যেতে পারি আমরা ।
• স্বরবৃত্ত ছন্দ
লোকজীবনের লৌকিক চঞ্চলতা থেকেই স্বরবৃত্ত ছন্দের উৎপত্তি । তাই একে লৌকিক ছন্দও বলা হয়। এটি বাংলা ছড়া/কবিতার নিজস্ব ছন্দ । এই ছন্দে মুক্তাক্ষর এবং বদ্ধাক্ষর উভয়ই একমাত্রা বিশিষ্ট । পর্বের প্রথমে একটি শ্বাসাঘাত বা স্বরাঘাত পড়ে বলে একে শ্বাসাঘাত প্রধান, স্বরাঘাত প্রধান ছন্দও বলা হয়। স্বরবৃত্তে ছড়ার চর্চা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে । স্বরবৃত্তের মূল বিষয়টিই আবর্তিত হয় দুটি সিলেবল বা
দলকে (মুক্ত ও বদ্ধ দল) ঘিরে । এটি দ্রুত লয়ের ছন্দ এবং এই ছন্দের পর্বগুলো সাধারণত চার মাত্রা বিশিষ্ট । তবে চার মাত্রার কমেও মূলপর্ব রেখে স্বরবৃত্ত চর্চা করতে দেখা যায় ।
স্বরবৃত্ত ছন্দের একটি উদাহরণ-
অই আমাদের /পাগলা জগাই,/ নিত্য হেথায় /আসে ;
আপন মনে /গুনগুনিয়ে/ মুচকি–হাসি /হাসে ।
চলতে গিয়ে/ হঠাৎ যেন/ থমক লেগে /থামে,
তড়াক করে /লাফ দিয়ে যায় /ডাইনে থেকে/ বামে । (সুকুমার রায় )
এখানে প্রতিটি লাইন ৪/৪/৪/২ মাত্রায় বিন্যস্ত ।
পর্ব-৬
আগের পর্বে স্বরবৃত্ত নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনার চেষ্টা করেছি। স্বরবৃত্তে পূর্ণপর্বের সাথে অপূর্ণপর্ব ও মধ্যখণ্ডন (পর্ব বিভাগ করার সময় কোনো কোনো শব্দ দ্বিখণ্ডিত করা, যেমন- ভঙ্গিতে= ভঙ/গিতে) থাকতে পারে।
মিল বিন্যাস বা বর্জনে, পর্বসংখ্যার কমবেশিতে অথবা পূর্ণপর্ব-অপূর্ণপর্বের তারতম্য ঘটিয়ে স্বরবৃত্ত ছন্দে নানা বৈচিত্র্য আনা যায়। এসব কারণে স্বরবৃত্তে বহু নিরীক্ষাধর্মী ছড়া আমরা দেখতে পাই । স্বরবৃত্তের কারুকার্যময় একটা ছড়া পড়ে নেয়া যাক-
হাতা, হাতা, হাতা
বকছো কেন যা-তা?
ছেড়ে আপেল আতা
ছিছি আরে ছিছি
কেন মিছেমিছি
খাচ্ছো আমার মাথা? (শামসুর রাহমান)
• মাত্রাবৃত্ত
মাত্রাবৃত্তের উৎপত্তি সংস্কৃত ছন্দ থেকেই। চর্যাপদে মাত্রাবৃত্তের রস আস্বাদন করা যায়। মাত্রাবৃত্ত অনেকটা স্বরবৃত্তের মতো মনে হলেও এই ছন্দে বদ্ধাক্ষর দু’মাত্রা বহন করে। কোনো অবস্থাতেই বদ্ধাক্ষর একমাত্রা হতে পারে না। অনেকেই তাই মাত্রাবৃত্তকে ‘যুক্তাক্ষর ভাঙা ছন্দ’ বলে অভিহিত করেন। তবে এক্ষেত্রে একটা ব্যতিক্রম রয়েছে। তা হচ্ছে শব্দের প্রথমে কোনো যুক্তাক্ষর থাকলে সেটা ভাঙা সম্ভব নয়, সে কারণে মাত্রাবৃত্তেও এটি একমাত্রাই পাবে। যেমন-‘গ্লাস’, এটি কিন্তু অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ততে দুমাত্রা পাবে। কারণ শব্দের শুরুতেই যুক্তাক্ষর ‘গ্ল’ কে ভাঙা যাচ্ছে না। অর্থাৎ, শব্দের আদি অক্ষর যদি যুক্তাক্ষর হয়, তাহলে মাত্রাবৃত্তে একমাত্রা হবে। আগেই বলেছিলাম, সব ছন্দেই মুক্তাক্ষর যেহেতু একমাত্রা তাই মাত্রাবৃত্তেও একমাত্রা গণ্য হয়। মাত্রাবৃত্তে লেখা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত হয় বিধায় গীতিকবিতা সাধারণত মাত্রাবৃত্তে লেখা হয়ে থাকে।
মাত্রাবৃত্তে মূল পর্ব চার, পাঁচ, ছয়, সাত বা আট মাত্রার হয়। এছাড়া, অতিপর্ব, অপূর্ণপর্ব ও মধ্যখণ্ডন থাকতে পারে ৷ এই ছন্দে বদ্ধাক্ষর সবসময় বিশ্লিষ্ট ভঙ্গিতে বা টেনে পড়তে হয়।
মাত্রাবৃত্তের উদাহরণ-
ওরে ভাই/ হারাধন ৪/৪
খুঁজে দেখো/ সারাবন ৪/৪
কোনখানে/ প্লাটিনাম ৪/৪
স্বর্ণ, ২
কোনখানে/ হীরামন ৪/৪
বেদনায়/ উন্মন ৪/৪
দাও তারে/ ব্যঞ্জন- ৪/৪
বর্ণ। ২ (দিলওয়ার)
তখনো ছিল/ অন্ধকার/ তখনো ছিল/ বেলা
হৃদয়পুরে/ জটিলতার/ চলিতেছিল/ খেলা (শক্তি চট্টোপাধ্যায়)
এখানে প্রতি লাইন ৫/৫/৫/২ মাত্রায় বিন্যস্ত।
এইখানে তোর/ দাদির কবর/ ডালিম-গাছের/ তলে
তিরিশ বছর/ ভিজায়ে রেখেছি/ দুই নয়নের/ জলে (জসীম উদদীন)
এখানে প্রতি লাইন ৬/৬/৬/২ মাত্রায় বিন্যস্ত।
পর্ব-৭
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ:
অক্ষরবৃত্ত মধ্যযুগে পয়ার নামে পরিচিত ছিল । মধ্যযুগের পয়ার যুগে যুগে বিভিন্ন কীর্তিমান কবির হাত ধরে সময়ের গতিপথে বহুবিচিত্রতায় নিজের অস্তিত্ব তুলে ধরেছে । এটি বাংলা কবিতার ছন্দে সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ছন্দ । এ কারণেই অক্ষরবৃত্ত ছন্দের প্রকার ভেদের অভাব নেই । আমরা এই আলোচনায় অক্ষরবৃত্তের প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করব না।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে মূল পর্ব আট বা দশ মাত্রার হয়। আগেই বলেছি, অক্ষরবৃত্তেও মুক্তাক্ষর এক মাত্রা এবং বদ্ধাক্ষর শব্দের প্রথমে ও মাঝে এক মাত্রা কিন্তু শব্দের শেষে দুই মাত্রা গণ্য হয় । এই ছন্দে লেখা কবিতার আবৃত্তি ধীরগতি হয়।
যেমন-
হাজার বছর ধরে/ আমি পথ হাঁটিতেছি/ পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে/ নিশীথের অন্ধকারে/ মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি ;/ বিম্বিসার অশোকের/ ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি;/ আরো দূর অন্ধকারে/ বিদর্ভ নগরে; (জীবনানন্দ দাশ)
এখানে কবিতার চরণ ৮ + ৮ + ৬ মাত্রায় বিন্যস্ত ।
বাংলা কবিতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত পয়ারের ক্লান্তিকর অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটান । প্রায় হাজার বছরের স্থবিরতা থেকে বাংলা অক্ষরবৃত্তের নতুন সম্ভাবনা তাঁর হাতেই রচিত হয়েছিল ।পরে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই আট/ছয় কৌশল থেকে বের হয়ে অক্ষরবৃত্তের দীর্ঘ চরণের সফল প্রয়োগ করেন । মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথের পথ অনুসরণ করে প্রবহমান যতি-স্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দের ব্যবহার করলেন রবীন্দ্রোত্তর আধুনিক কবিরা । যেমন-
আহ্লাদের অবসাদে ভরে আসে আমার শরীর,
চারিদিকে ছায়া–রোদ–খুদ–কুঁড়ো– কার্তিকের ভিড়,
চোখের সকল ক্ষুধা মিটে যায় এইখানে, এখানে হতেছে স্নিগ্ধ কান
পাড়াগাঁর গায়ে আজ লেগে আছে রূপশালী ধানভানা রূপসীর শরীরের ঘ্রাণ। (জীবনানন্দ দাশ)
এখানে, প্রথম দু’টি চরণে ১৮ মাত্রা, তৃতীয় চরণে ২৬ মাত্রা এবং চতুর্থ চরণে ৩০ মাত্রা । অনেক মনীষী বলে গেছেন, অক্ষরবৃত্তের বিবর্তনেই এসেছে গদ্যকবিতা । তাই, গদ্যকবিতার নামে গদ্যের অপভ্রংশ চালিয়ে দেওয়ার কোনো জায়গা নেই । কবিতা লিখতে ছন্দ লাগবেই ।
নতুনদের আগ্রহের কারণেই এই আলোচনায় ‘ছন্দ’ নিয়ে কিছু কথা বলা । সাহিত্যে ছড়ার অবস্থান নিয়ে এই আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল । তাই নতুন ছড়াকারদের ছন্দ শেখার পাশাপাশি বুঝতে হবে শুধু ছন্দের ছাঁচে ফেলেই দিলে সেটি ছড়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত কাঠামোটি ছড়ার বৈশিষ্ট্য ধারণ না করে । ছড়ার পঠন হচ্ছে দ্রুতলয়ের, বক্তব্য তীর্যক অথবা সরল হতে পারে । বিষয় নির্বাচনে সমকাল এবং ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখলে শানিত হয় । সফল ছড়ার জন্য শব্দ নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । ছড়া খুব বেশি দীর্ঘ হলে তার আবেদন হারিয়ে ফেলতে পারে । কিন্তু বুননের মুন্সিয়ানায় দীর্ঘ ছড়া লেখা যেতে পারে ।
অনেকেই পদ্যকে ছড়া হিসেবে ভাবেন বা বুঝে থাকেন । শুধু অন্ত্যমিল থাকলেই ছড়া হয়ে ওঠে না । এখন প্রশ্ন আসতে পারে পদ্য কী ! পদ্য বলতে আমি বুঝি অন্ত্যমিলসমৃদ্ধ কবিতা । যা শিশুকিশোর অথবা বড়োদের জন্যও হতে পারে । তবে সেটি কবিতার চাইতে কম গভীরতার হবে । যা পাঠ করে ছড়ার মতো দ্যোতনা আসবে না আবার কবিতার মতো ভারী আলোচনার সূত্রপাত করবে না ।
নতুন লিখিয়েদের ছন্দ ইত্যাদির পাশাপাশি আরও কিছু বিষয়ে নজর রাখতে হবে । এ ব্যাপারে পরের পর্বে আলাপ করা যাবে ।
শেষ পর্ব
ছন্দ বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাই ছড়া প্রধানত স্বরবৃত্তে লেখা হয় । মাত্রাবৃত্তেও ছড়া চর্চা একটি নিয়মিত বিষয় কিন্তু অক্ষরবৃত্তে ছড়াচর্চা ছড়ার আঙ্গিকের সাথে মানানসই নয় । অর্থাৎ ছড়াচর্চার জন্য উপযুক্ত ছন্দ হলো স্বরবৃত্ত এবং মাত্রাবৃত্ত । এখন প্রশ্ন আসতে পারে এই আলোচনায় আমি অক্ষরবৃত্তের আলোচনা কেন এনেছি । আমরা ছন্দ বিশ্লেষণে দেখতে পাই অক্ষরবৃত্ত একটি ধীর লয়ের ছন্দ , এর মাধ্যমে লিখিত কবিতা আবৃত্তি বা পাঠে হৃদয়ে ঝংকার তৈরির উপাদান নেই । তাই এটি ছড়ার উপযুক্ত ছন্দ নয় । অক্ষরবৃত্তে রচিত কবিতার ধীরলয় বৈশিষ্ট্যের কারণেই হয় তো পাঠক সীমাবদ্ধতা দেখা যায় ।
নতুন লিখিয়েদের শুধু ছন্দ জানলেই হবে না একইসাথে নির্ভুল বানান , যতি চিহ্নের ব্যবহার ও ব্যাকরণের অন্যান্য বিষয়গুলো সম্বন্ধেও সম্যক ধারণা রাখতে হবে । শব্দের ভান্ডার ঋদ্ধ করতে হবে, ব্যাপক পড়াশোনা ও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে । বিষয় নির্বাচনে চৌকষ হতে হবে । ছড়ায় বাহুল্য পরিহার করতে হবে । ছড়ার বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে জানার চেষ্টা করতে হবে । যেমন, ক্লেরিহিউ, লিমেরিক, গ্রুক ইত্যাদির মতো ছড়ার বিভিন্ন আঙ্গিক ছড়াকে সমৃদ্ধ করেছে । আগামীতে ছড়ার বিভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে আলোচনার ইচ্ছে থাকল ।
এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, ছড়া- সাহিত্যের পাঠক আকর্ষণের অন্যতম মাধ্যম । যে কারণে আমরা দেখতে পাই, ছড়ার পাঠক হচ্ছেন আধো বোল বাচ্চা থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ পর্যন্ত । আধো বোলের বাচ্চা যেমন ছড়ার তালে আনন্দিত হয় তেমনি সব বয়সের পাঠকই ছড়ার মাধুর্য উপভোগ করেন । গ্রাম বাংলার সেই লোকছড়া থেকে আজকের দিনের ছড়া সাহিত্যমূল্যের পাশাপাশি সময়কে ধারণ করে চলেছে ।
সাহিত্যের একটি মাধ্যম হিসেবে ছড়া যে কোনোভাবেই ফেলনা নয় তা ছড়ার ব্যাকরণসম্মত গঠন ও পাঠক চাহিদা বরাবরই প্রমাণ করে চলেছে । কিন্তু পরিতাপের বিষয় সমস্ত গুণাবলী নিয়েও সাহিত্যের একটি অবহেলিত শাখা হিসেবে ছড়া তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে । সাহিত্যে কুলীন দাবি করা কবিতা, গল্প , উপন্যাসের চাইতে ছড়া কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই তা যুগে যুগে কালোত্তীর্ণ ছড়াকাররা প্রমাণ করে গেছেন । যে ছড়া পাঠের মাধ্যমে শিক্ষিত হওয়ার শুরু সেই ছড়াকেই তীর্যক চোখে দেখার মানসিকতা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় ।
বাংলা একাডেমির মতো অভিভাবক প্রতিষ্ঠান ‘ছড়া’র জন্য আলাদা পুরস্কারের ব্যবস্থা না করে ‘শিশুসাহিত্য’ ক্যাটাগরিতে ছড়াকারদের মূল্যায়ন করেন । কিন্তু এতে ছড়াকাররা যেমন নিয়মিত মূল্যায়িত হতে পারেন না একইভাবে ছড়া সম্পর্কে ‘শুধু ছোটদের’ সেই ধারণাটিও পোক্ত হয় । তাই গুরুত্বপূর্ণ সকল পুরস্কারে ‘ছড়া’ ক্যাটাগরি একটি ন্যায্য বিষয় । এছাড়াও ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত পাঠ্যসূচিতে ছড়ার অন্তর্ভুক্তি কোনো অন্যায্য দাবি মনে হয় হবে না। ‘ছড়া’ নিয়ে সাহিত্যবোদ্ধাদের ব্যাপক পরিসরে কাজ করার উদ্যোগ নেয়া উচিত । কারণ , ছোট থেকে বড়ো সকল শ্রেণীর পাঠকের কাছে দারুণ দ্যোতনায় একমাত্র ছড়াই পৌঁছুতে পারে । ছড়ার চপলতা, ঝংকার ও সার্বজনীনতা সাহিত্যের অন্য কোনো মাধ্যম দিতে পারে না । তাই, ছড়া সাহিত্যের মাঠে সবচেয়ে দুরন্ত খেলোয়াড় । যে খেলেয়াড় খেলে যাচ্ছে দ্রুত তালে , অন্য খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে ।
গণমানুষের কবি দিলওয়ার এর একটি ছড়া দিয়ে এই আলোচনার ইতি টানতে চাই –
হাতের দিকে হাত বাড়াও
বুকের মাঝে বুক মিলাও
এক কাতারে সব দাঁড়াও
প্রাণে প্রাণে সুখ বিলাও,
কিশোর তরুণ ভগ্নি ভাই
রক্তে আশার অগ্নি চাই ।
পুকুরে নয় সিন্ধু-তে,
জীবন তো নয় বিন্দু তে ,
আওয়াজ তুলো- সিন্ধু চাই,
অফুরন্ত বিন্দু চাই,
বিন্দু বিন্দু সূর্যরস
মরণজয়ী দীপ্ত যশ ।