অ আ ক খ বর্ণমালা / প্রাণের হরফ স্বর্ণমালা / বর্ণে খুঁজি সুখটা / এই ভাষাটা মাতৃভাষা / পরম স্নেহের ধাতৃভাষা / ভোলায় মনের দুখটা। / বর্ণামালা মায়ের আদর / যত্নভরা স্নেহের চাদর / হাসিভরা প্রাণটা / এই ভাষাতে বাবার শাসন / হালকা রাগে মোহন ভাষণ / ভালোবাসার গানটা।
এরকম মজাদার ও শিক্ষণীয় সব ছড়ায় সমৃদ্ধ শিশুতোষ ছড়ার বই-‘ছন্দ হাসে দূর্বাঘাসে’। তরুণ ছড়াকার শাহজাহান শাহেদ-এর প্রথম ছড়াগ্রন্থ এটি।
বইয়ের প্রতিটি ছড়াই শিশু-কিশোরদের উপযোগী করে লেখা। ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও ছড়াগুলো পাঠ করে মজা পাবে। উদাহরণস্বরূপ- ‘পশু-পাখির ডাক’ ছড়াটির অংশ বিশেষ এখানে তুলে ধরছি-
‘মোরগ ডাকে কুক্কু-রু-কু / বিড়াল ডাকে মেউ / ম্যাঁ ম্যাঁ করে ছাগল ডাকে / কুকুর ডাকে ঘেউ। / হাম্বা করে লাল গরুটা ‘কা’ ‘কা’ করে কাক / রাত্রিবেলা শেয়াল ডাকে / হুক্কাহুয়া ডাক। / সিংহমামা গর্জে ওঠে / হালুম হালুম বাঘ / অশ্ব ডাকে হ্রেষা সুরে / পায়রা বাকুম বাক।…’
ছোটদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ আনতে ছড়াকার বলেন- ‘‘ খোকনসোনা পড়তে বসো / মহান রবের নামে / নিত্য সকাল-সন্ধ্যা-রাতে / তাই যেন না থামে।’
আবার কলমের কথা ছড়াকার শাহজাহান শাহেদের ছড়ায় চিত্রিত হয়েছে এভাবে- ‘কেউ কলমে স্বপ্ন বুনে / কল্প করে চাষ / কেউ বা আবার কলম দিয়ে / ঘটায় সর্বনাশ।’
আল-কুরানের প্রথম সুরা ফাতেহা একটি প্রার্থনা। সেই সুরাটিকে অনেক কবিই কাব্যানুবাদ করেছেন। শাহজাহান শাহেদের ছড়ানুবাদ এরকম- ‘প্রশংসা সব আল্লাহপাকের / এই জাহানের রব যিনি / মেহেরবান ও খুব দয়ালু / বিচার দিনের সব তিনি।’
সকালবেলার দৃশ্য তিনি চিত্রিত করেছেন চমৎকারভাবে ছড়ার ছন্দে- ‘কিচিরমিচির পাখির ডাকে / ভাঙ্গে ভোরে ঘুম / কানন-বনে ফুলরা ফোটে / পূর্বাকাশে সূর্য ওঠে / দেয় কপালে চুম।’
আমাদের প্রিয়নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর কথা ছড়াকারের ছড়ায় এসেছে এভাবে- ‘আরব মরুর পুষ্পিত ফুল / সুবাস যার অতুল / স্নিগ্ধ গোলাপ জুঁই বেলিফুল / মুহাম্মদ রাসুল।’
মহান বিজয় দিবস এসেছে একসাগর রক্তের বিনিময়ে। দীর্ঘ ন’মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি আমরা একাত্তরে। সেই বিজয়দিবসকে স্মরণ করে আজকের শিশু-কিশোররা কী করছে। তাদের কাছে বিজয় কী রকম? ছন্দে ছন্দে ছড়াকার বলছেন- ‘বিজয় মানে শিশুর দলে সবুজ-শ্যামল মাঠে / খেলতে ছুটে, সাঁতার কাটে / নদ ও পুকুরঘাটে / খুসুটি আর দুষ্টুমিতে আড্ডা জমায় সবে / হাস্যমুখে সকল শিশুর নিত্য অনুভবে।’
আমাদের গ্রামের ছবি কতই না সুন্দর। সেই চিত্র শহরের ছেলেমেয়েরা জানবে কীভাবে? ছড়াকার জানাচ্ছেন- ‘আমাদের গাঁয় / বেলা-অবেলায় / কৃষাণ-কৃষাণি খাটে / মাঝি সুরে গায় / দাঁড় টেনে যায় / পুবালি খেয়ার ঘাটে…।’
একটি ছড়ার মানে কী তা নিয়ে ছোটদের মনে নানা প্রশ্ন। ছড়াকার বলছেন একটি ছড়ার কথা এভাবে-
‘এই ছড়াটা চিত্র আঁকা / নরম শীতলপাটির / এই ছড়াটা সবুজ-ম্যামল / আমার দেশের মাটির।’
ইফাত আরা স্মরণের নজরকাড়া চাররঙের প্রচ্ছদ আর ভেতরে ছড়ার সঙ্গে মিল রেখে চমৎকার অলংকরণে সমৃদ্ধ ‘ছন্দ হাসে দূর্বাঘাসে’ বইটি। বইয়ের নামের মধ্যেই একটি ছন্দ ছন্দ ভাব রয়েছে।
বইটি প্রকাশ করেছে সৃজনশীল প্রকাশনী সংস্থা-পাপড়ি। মূল্য : ৭০ টাকা মাত্র। ৩০% ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে রকমারি ডটকমে।