কামরুল আলম ।। লেখালেখি করতে গেলে প্রায়ই তোমরা দ্বিধায় পড়ে যাও, তাই না? মনে করো তুমি একটি গল্প লেখা শুরু করেছো। গল্পের এক জায়গায় তোমাকে লিখতে হচ্ছে ‘পাখিটি উড়ে গেল’; এখানে ‘উড়ে’ হবে নাকি ‘ওড়ে’ হবে এই নিয়ে তুমি দ্বিধায় পড়ে যেতে পারো। কারণ তুমি তো প্রায়ই গল্প-কবিতায় পড়েছো ‘পাখি আকাশে ওড়ে’। এখানে ‘ওড়ে’ না হয়ে ‘উড়ে’ হবে না কেন? মনের মাঝে প্রশ্ন উঁকি দিলেও জানতে চাওয়া হয়নি কখনোই, তাই না বন্ধুরা?
ক্রিয়পদের বানানগুলো ঠিকঠাক লিখতে অনেককেই হিমশিম খেতে হয়। বিশেষ করে যারা লেখালেখির সঙ্গে জড়িত তারা প্রাইয় বুঝে উঠতে পারে না, কোথায় ‘বুঝে’ হবে আর কোথায় ‘বোঝে’ হবে। একইভাবে ‘খুঁজে’ এবং ‘খোঁজে’, ‘ঘুরে’ এবং ‘ঘোরে’ ‘ভুলে’ এবং ‘ভোলে’ প্রভৃতি লিখতে গিয়ে অনেককেই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগতে দেখা যায়। তো বন্ধুরা, এরকম ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের নিকট জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়ার চেয়ে নিজেরাই সমাধান করতে পারলে কেমন হয়? আজ তোমাদেরকে এ বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলব যাতে তোমরা নিজেরাই এ সমস্যার সমাধান করতে পারো।
অনেকেই মনে করে, ওঠে-উঠে, তোলে-তুলে, বোঝে, বুঝে, কেনে-কিনে, মেশে-মিশে, শেখে-শিখে, লেখে-লিখে ইত্যাদি ক্রিয়াপদের বানানের ক্ষেত্রে যেকোনো একটা দিলেই হলো; আসলে তা না। এ বিষয়টি জানতে হলে ‘সমাপিকা ক্রিয়া’, অসমাপিকা ক্রিয়া’, ক্রিয়াপদের ‘বিবৃত রূপ’ ও ‘সংবৃত রূপ’ সম্পর্কে জানতে হবে।
সমাপিকা ক্রিয়া কী?
যে ক্রিয়াপদ দ্বারা একটি বাক্য শেষ হয়। যেমন : সে গাড়িতে ওঠে। পাখি আকাশে ওড়ে। শরীফ ভালো ছেলেদের সাথে মেশে। রোমান বই কেনে। সে ভাষা শেখে। এসব বাক্যে ওঠে-ওড়ে-মেশে-কেনে-শেখে ইত্যাদি দ্বারা বাক্য শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই এখানে ক্রিয়াপদের বিবৃত রূপটা ব্যবহৃত হয়েছে। বিবৃত রূপ কী? যেটা উচ্চারণ করতে ঠোঁট বেশি মেলতে হয়, সেটা। যেমনÑ‘উড়ে’ বলতে ঠোঁট বেশি মেলতে হয় না; কিন্তু ‘ওড়ে’ বলতে গেলে ঠোঁট বেশি মেলতে হয়।
অসমাপিকা ক্রিয়া কী? যে ক্রিয়াপদ দ্বারা একটি বাক্য শেষ হয় না, কিছু বাকি থেকে যায়। যেমন: সে গাড়িতে ‘উঠে’ বসে পড়ল। পাখিটি ‘উড়ে’ গেল। শরীফ ভালো ছেলেদের সাথে ‘মিশে’ অনেক কিছু জেনেছে। রোমান বই ‘কিনে’ পাঠ করে। সে ভাষা ‘শিখে’ জ্ঞানী হবে। এখানে উঠে-উড়ে-মিশে-কিনে-শিখে দ্বারা একটি বাক্যও শেষ হয়নি। তাই এরা অসমাপিকা ক্রিয়া এবং এসব ক্ষেত্রে ক্রিয়াপদের সংবৃত রূপ ব্যবহৃত হয়েছে।
সংবৃত রূপ কী?
যেটা উচ্চারণ করতে ঠোঁট কম মেলতে হয়, সেটা। যেমন : উচ্চারণের ক্ষেত্রে ঠোঁট বেশি মেলতে হয় ‘ওড়ে’ ও ‘কেনে’-তে, আবার কম মেলতে হয় ‘উড়ে’ ও ‘কিনে-তে। তাই ‘ওড়ে’ ও ‘কেনে’ হচ্ছে বিবৃত রূপ এবং ‘উড়ে’ ও ‘কিনে’ হচ্ছে সংবৃত রূপ।
তাহলে তোমরা তো আর ভুল করবে না, তা-ই না? কী বললে, ভালো করে বুঝে উঠতে পারোনি? নতুন কিছু শিখলে সেটা বারবার চর্চা করা দরকার হয়। চর্চা চালিয়ে যাও, দেখবে একদিন তোমরাও দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।