পাপড়ি নিউজ:: ২৫ অথবা ২৬ এপ্রিল শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রামাদ্বান। রামাদ্বান মানেই ঈদের আনন্দ! বলা যায় রামাদ্বান শুরু হওয়া মাত্রই ব্যবসায়ীদের মনে ঈদের আনন্দ প্রবেশ করে। বিশেষ করে বস্ত্র ব্যবসায়ীগণ তো এই ঈদকে সামনে রেখেই সারা বছরের ব্যবসা করেন এক মাসে! এবার করোনা ভাইরাসের কারণে চলছে লকডাউন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদির দোকান আর ওষুধের দোকান ছাড়া অন্যান্যদের সব দোকানপাটই বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় একমাসের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে। রামাদ্বানে লকডাউন খোলার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এ কারণে ব্যবসায়ীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে একেবারে। হতাশা ভর করেছে অনেকের মনে।
এ বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জনৈক ব্যবসায়ী বলেন, রোজার জন্য উৎপাদনের যে প্রস্তুতি ছিল তার ৭০ শতাংশ উৎপাদন হয়ে গেছে। আমাদের শো-রুমগুলোতে প্রদশর্নীর সময় চলে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের শো-রুমগুলো ও অনলাইনও বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি সরকার ই-কমার্সের অনুমতি দিয়েছে। এখন আমরা চিন্তা করছি কিভাবে অনলাইনে বাজার ধরা যায়।
তিনি বলেন, রমজানে আমাদের ৪০ দিনের ব্যবসা হয়। এখানে শতভাগ লোকসান হবে। কারণ এখন কিছুই খোলা নেই। তবে অনলাইন চালু হলে ৫ শতাংশ বাজার ধরা যাবে। সে হিসেবে আমাদের মোট ব্যবসার ৯৫ শতাংশই ক্ষতির সম্মুখে পড়বে। এছাড়া পণ্য পৌঁছানো ও নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। তবে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।
স্নোটেক্সের সহকারী ব্যবস্থাপক (পিআর) শেখ রাহাত অয়ন গণমাধ্যমকে বলেন, করোনার কারণে আমাদের সবকিছুইতো বন্ধ আছে। নতুন করে প্রস্তুতি নেবো কিভাবে? আমরা রোজা শুরুর দুই থেকে তিন মাস আগে প্রস্তুতি নিতে থাকি। আমাদের ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ হয়ে গেছে। এ অবস্থা থাকলে রোজা ও ঈদের বাজার হারাবো। আমরা এখন ব্যবসা না বেঁচে থাকার চিন্তা করছি। কারণ সবকিছু বন্ধ থাকলেও আমাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে হয়। আমাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু ব্যয় বন্ধ হয়নি। এভাবে কত দিন চলা যায়। সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে তা বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতেই যাবে।
তিনি বলেন, আমরা নিজেদের ও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে যা করা দরকার সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী করবো। সরকার যদি আমাদের অনলাইনে ব্যবসা করার সুযোগ দেয় তাহলে যথেষ্ট নিরাপত্তা নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করতে প্রস্তুত আছি। আমাদের যে জনবল আছে তা দিয়ে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে পণ্য পৌঁছে দিতে পারবো। এতে করে আমাদের কিছু হলেও আয় হবে যা দিয়ে অত্যন্ত কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের মধ্যমে ফ্যাশন হাউসগুলোতে যে জিনিসগুলো তৈরি হয়েছে সেগুলো কিভাবে বিক্রি করতে পারি সেটা নিয়ে কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। এজন্য আমরা ই-কমার্সকে এই লকডাউন অবস্থায় ফ্যাশন হাউজের যে পণ্যগুলো তৈরি হয়। তার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য বলছি। যাতে তারা ঈদের বাজারটা ধরতে পারে বা রমজানে বিক্রি করতে পারে। এক্ষেত্রে নিত্যপণ্য, ওষুধ ও ফ্যাশন পণ্যগুলো গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে ই-কামার্সের। নিরাপত্তায় সরকারের নির্দেশনা অনুয়ায়ী কাজ করা হচ্ছে। কারণ এবারের রমজানটা অন্য ১০টা রমজানের মতো না। এজন্য মন্দের যতটা ভালো করার সম্ভব হয়। তাই করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ব্যবসা নিয়ে কোনো প্রস্তুতি নেই। সবকিছু বন্ধ, কবে খুলবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন আল্লাহ উপর ভরসা। এবারের রোজায় গতানুগতিক বেচাবিক্রি হবে না। তবে রোজার থেকেও ভয়ানক হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকা। আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টা করছি। সরকার ইতোমধ্যে যে প্রণোদনা দিয়েছেন সেটা বড় ব্যবসায়ী ছাড়া কেউ পাবে না। তাই এটা দিয়ে আমাদের কোনো লাভ হবে না। তবে আমরা এখন অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে আছি। কোথায় গিয়ে শেষ হবে আমরা জানি না। বিশেষ করে ক্ষুদ্র পুঁজির ব্যবসায়ীদের বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয়।
বাণিজ্য সিনিয়র সচিব ড. জাফর উদ্দীন বলেন, করোনার মধ্যেও রমজানে ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় একটি গ্রুপ আছে। তারা কাজ করে যাচ্ছেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা বড় পরিসরে আবার আরো কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে। এজন্য একটি সফটওয়ারের কাজ চলছে। রোজার আগেই কাজ শুরু করতে পারবেন তারা। শুধু ঢাকা নয় বাংলাদেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এজন্য নতুন করে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে নিত্যপণ্য ও ওষুধ থাকবে। যা রিটেলারদের মাধ্যমে সারাদেশে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
ফ্যাশন হাউজগুলো তৈরি পণ্য ই-কমার্সের তালিকাভুক্ত পণ্যের মধ্যে থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সব বলতে চাচ্ছি না। তবে সামনে যেহেতু ঈদ তাদের তৈরি পণ্য থাকাটাও জরুরি। আমার ধারণা এটাও থাকবে। করোনার কারণে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে। তা কিছুটা কমিয়ে আনতে সরকার ইতোমধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সেটা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই প্রণোদনার আওতায় ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীসহ সবাই আসবে।
বাণিজ্যসচিব বলেন, রমজান উপলক্ষে আমাদের দুই দিকে প্রস্তুতি ছিল। একটা হলো সাপ্লাই চেইন সচল রাখা সেটা টিসিবির মাধ্যমে ও বাজারে যাতে দ্রব্যমূল্য না বাড়ে সেটা ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে মনিটরিং জোরদার করা। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছিলাম। মাঝে করোনা ভাইরাস এসে পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেটা হলো রোজা এবং করোনা দুইটা মাথায় রেখেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সব ধরনের পণ্যে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। রোজা ও এরপরে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না। আমাদের আমদানি-রপ্তানি চলমান রয়েছে। তবে আগের মতো পুরোপুরি না। রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য তেল, ডাল, ছোলা, চিনি, খেজুর ও পেঁয়াজ পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আমাদের সমস্যা হলো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা ভোক্তা অধিদপ্তরের টিম আরও শক্তিশালী করে মাঠে নামানো হয়েছে। তারা ঢাকাসহ সারাদেশে সবসময় মাঠে আছে। টিসিবিও ঢাকায় ৯০টি স্থানসহ সারাদেশের ৪০০ স্থানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া জেলা পর্যাযে যে অনিয়ম হয়েছে সেটা মাথায় রেখেই মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এখন আর অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই। অনিয়ম হলে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। এখন আমরা কাউকে ভয় পেয়ে কাজ করছি না।
পাপড়ি / কেএ