Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল) ২৮.৯৬°সে

বুনো ঝর্ণা হামহাম’র সন্ধানে । কামরুল আলম

Spread the love

চায়ের রাজধানী খ্যাত পাহাড়ি জেলা মৌলভী বাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার গহীন অরণ্য কুরমায় অবস্থিত মহান আল্লাহর অপূর্ব এক সৃষ্টি হাম হাম জলপ্রপাত। টলমলে স্বচ্ছ পানির ধারা গড়িয়ে পড়ছে শক্ত পাথরের মতো পাহাড়ের শরীর লেপটে। নির্জন, শান্ত পাহাড়ের প্রায় দেড়’শ ফুট উঁচু থেকে আছড়ে পড়া স্রোত ধারার কলকল শব্দ বয়ে যাচ্ছে সমতলে। নাম না জানা লতাপাতা-গুল্ম, বাঁশবন, বুনোফুল ও ফলের গাছ আগলে রেখেছে পরম মমতায় সৃষ্টির বিষ্ময় এই ঝর্ণাটিকে। যে বুনো ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না সহজে।

সিলেট বিভাগের কমলগঞ্জ উপজেলায় এমন সুন্দর দর্শনীয় স্থান আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল এতদিন, ভাবতেই অবাক লাগে। দুর্গম পাহাড়ি এই ঝর্ণা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে প্রতিদিন। অথচ যোগাযোগ ব্যবস্থা আর প্রচারণার অভাবে হাম হাম নামের এই জলপ্রপাতটি রয়ে গেছে সকলের দৃষ্টির আড়ালে।

সীমান্তবর্তী কুরমা বন বিটের দুর্গম পাহাড়ের অভ্যন্তরে নয়নাভিরাম ও রোমাঞ্চিত হাম হাম জলপ্রপাতটির ঠিক পূর্ব দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। কমলঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কি.মি পূর্ব দক্ষিণে রাজকান্দি রেঞ্জের কুরমা বন বিটের প্রায় ৮ কি.মি অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন এই হাম হাম জলপ্রপাতে যাওয়ার জন্য সরাসরি কোন যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে কুরমা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ২৫ কি. মি রাস্তা পাকা। তারপরের অংশের প্রায় পুরো রাস্তাই কাঁচা। এ রোডে চলাচলকারী বাস, জীপ কিংবা মাইক্রোবাস যোগে কুরমা সীমান্তে যাওয়ার পর বাকি প্রায় ১০ কি.মি পথই পায়ে হেঁটে যেতে হয় কলাবন নামক পাহাড়ি অধিবাসীদের এলাকায়। তারপর পাহাড়ের আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পথ দিয়ে জীবন মরণ যুদ্ধ করে প্রায় ৩ ঘন্টা হাঁটার পর দেখা পাওয়া যায় হাম হামের।

২৭ শে অক্টোবর ২০১১। সিলেট নগরীর মাশালা গ্রীল চাইনিজ রেস্টুরেন্টে একটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করার উদ্দেশ্যে সম্ভাবনাময় আর স্বনামধন্য কয়েকজন সিনিয়র-জুনিয়র বন্ধু মিলে বসেছিলাম এক আলোচনা সভায়। আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ। সিলেট লিডিং ইউনিভার্সিটির বিবিএ’র ছাত্র ফুয়াদুর রহমান অন্য সকলের মতোই একটি নাম প্রস্তাব করলে সেটাই সেদিনের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়ে যায়। প্রস্তাবিত সেই নামটি ছিল হাম হাম। নামকরণ এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার ফাঁকে হঠাৎ করেই প্রস্তাব দিলাম যে, ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে একবার হাম হাম দেখে আসা দরকার। প্রস্তাবের সাথে সাথে অনেকেই সানন্দে রাজী হয়ে গেলেন। ঈদের দিন ফোনে যোগাযোগ করে সিলেট এমসি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র সৈয়দ সালেম হোসেনকে দায়িত্ব দিলাম সবকিছু আয়োজনের। সালেমের বাড়ি বড়লেখায় হওয়াতে সেখান থেকেই গাড়ি ঠিক করা হলো। ঠিক হলো ৯ নভেম্বর সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার সময় কুলাউড়ায় গিয়ে তাদের মাইক্রোবাসটি থামবে।

৯ তারিখ সকালে যথারীতি সিলেট শহর থেকে আমি মোটর বাইকে রওয়ানা দিলাম কুলাউড়ার উদ্দেশ্যে। সঙ্গে নিলাম আমার ভাগনা তানিমুল হোসাইন হাদীকে। হাদী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। আমরা সকাল সাড়ে ৬টায় রওয়ানা দিয়ে সাড়ে ৭টার সময় পৌঁছে গেলাম কুলাউড়ার ষ্টেশন রোডে শাকির আহমদের বাড়িতে। শাকির লিডিং ইউনিভার্সিটিতে এলএলবি অনার্স পড়ছে। শাকিরের বাড়িতে চালের গুড়ির রুটি আর কুরবানির গরুর গোশত দিয়ে নাস্তা পর্ব সেরে নিলাম। চলল আরো বহুরকমের আপ্যায়ন। বসে অপেক্ষা করছিলাম গাড়ি কখন আসবে। সিলেট থেকে এক ঘন্টায় কুলাউড়ায় পৌঁছালেও বড়লেখা থেকে তাদের পৌঁছাতে লেগে গেল প্রায় দেড় ঘন্টা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাড়ি থেকে নেমে আসলো ওরা ৭ জন। সৈয়দ সালেম হোসেন, মাহমুদুল হাসান সুমন, ফুয়াদুর রহমান, কামরুজ্জামান তায়েফ, সাদেকুজ্জামান পাভেল, মাসুম আহমদ ও জিয়া উদ্দিন। সেখানে হালকা নাস্তা শেষে সবাইকে নিয়ে মাইক্রোটি রওয়ানা দিল কমলগঞ্জের উদ্দেশ্যে। দেরি করে আসার জন্য সালেমকে অনেক কথা শুনতে হলো। অবশেষে কাঙ্খিত সেই কলাবনে গিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঘড়িতে সকাল ১১টা পঞ্চাশ মিনিট বেজে গেল। সাইনবোর্ড ঝুলানো ছিল হাম হাম দর্শনার্থীদের জন্য। সেখানে লেখা রয়েছে দুপুর ১২টার পর প্রবেশ নিষেধ। কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় অধিবাসীরা জানালেন এখান থেকে দ্রুত পায়ে যেতে আসতে কম করে হলেও ৫ ঘন্টা সময় লাগে। সন্ধ্যার আগে আগে ফিরতে না পারলে বিপদের আশংকা রয়েছে তাই এ ব্যবস্থা।

স্থানীয়দের মধ্য থেকে দু’জন পথ নির্দেশক বেছে নিলাম ৪০০ টাকার বিনিময়ে। গাইডদের দু’জনেই হাতে দা নিয়ে এগিয়ে গেল সম্মুখপানে। কিছুক্ষণ হাঁটার পর একজন গাইডকে সবার পেছনে পাঠিয়ে দিলাম। আমি একটু দ্রুত পায়ে হাঁটছিলাম আর সবাইকে তাগদা দিচ্ছিলাম। কারণ সন্ধ্যার আগে ফিরতে হবে। গাইডেরাও তাড়া দিচ্ছিল সবাইকে। বুনো পাহাড়ের আঁকা বাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা যখন সবাই প্রায় ক্লান্ত হয়ে গেছি তখন গাইডদের একজন জানালো এখনও আসল হাঁটা শুরুই হয়নি। পানি পথে হাঁটতে হবে কম করে হলেও আড়াই ঘন্টা। ভয়ে সেখান থেকেই অনেকে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করছিলাম। আরো কিছু দূর হাঁটার পর গাইডেরা আমাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে বাঁশের লাঠি যোগাড় করে দিল। লাঠি ছাড়া নাকি সামনের পথ পাড়ি দেওয়া যাবে না । রোমাঞ্চের গন্ধ পেলাম তাদের কথায়।

এগিয়ে যাচ্ছিলাম দ্রুত গতিতে। এক সময় নেমে যেতে হলো পাহাড়ি ঝর্ণার স্রোত ধারায় তৈরি হওয়া ঝিরি পথে। চলার পথে চোখে পড়লো সারি সারি কলা বাগান, জারুল আর চিকরাশি কদমের সারিবদ্ধ বাগান। চারদিকে গাছ গাছালি ও প্রাকৃতিক বাঁশবনে ভরপুর এই জঙ্গলী পথে হাঁটতে যেমন কষ্ট হচ্ছিল তেমনি মনের আনন্দে হৃদয়ের গভীর থেকে বেরিয়ে আসছিল মহান আল্লাহর প্রশংসাসূচক গান, যিনি সৃষ্টি করেছেন এই মনোমুগ্ধকর বন। পাথুরে পাহাড়ের ঝিরিপথে হেঁটে যেতে যেতে শুনতে পাচ্ছিলাম অগণিত পাখির কলরব। ডলু, মলি, মিরতিঙ্গা আর বেত বাগান ও ডুমুর গাছের শাখার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যাচ্ছিল বেশ কয়েকটি চশমা বানর। মাঝে মধ্যে দূর থেকে ডেকে ওঠা বনমানুষ, উল্লুক আর গিবনসের ডাকও কানে আসছিল। গাইডেরা জানালো ভয়ের কিছু নেই, দিনের বেলা ওরা মানুষের সামনে আসবে না । পায়ের জুতো লাঠিতে বেঁধে নিলাম দড়ি দিয়ে। কেউ কেউ নিজের কোমরে বেঁধে নিয়েছে জুতো। যতই সামনের দিকে যাচ্ছি মনে হচ্ছিল জঙ্গলটি যেন ক্রমশঃ গহীন হচ্ছে । প্রায় ৮ হাজার একর জায়গা জুড়ে এই বনটি বিস্তৃত। এখানে বানর, হরিণ, ভাল্লুক এবং বন্য শুকর তো আছেই। রয়েছে ভয়ংকর সব সাপের আনাগোনা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জোঁক। অন্যরা মানুষের সাথে লাগতে না এলেও জোঁকেরা জেঁকে বসতে দ্বিধা করে না একটুও। আমাদের সবার সামনে একজন গাইড। দলের নেতা হিসেবে সবার সামনে ছিলাম আমি। কিন্তু পিচ্ছিল পাথর আর কাঁটাযুক্ত পানি দিয়ে মোটা শরীর নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল বিধায় ধীরে ধীরে সবার পেছনে চলে এলাম। আমি দুর্বল হয়ে গেছি বুঝতে না দিয়ে পেছন থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার গুরুত্ব বুঝালাম সবাইকে। চলার পথে অনেকেই ক্যামেরায় ছবি উঠাচ্ছিল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। শেষ মুহূর্তে শাকির মুভি করা শুরু করে দিল। ব্যাপারটা ছিল খুবই কষ্টকর। তবুও এরই মাঝে সবাই আনন্দ খোঁজে নিল।

পথ ছিল পাথরে ভরা। ঝিরির পানি ঘোলা। এর মধ্যে কোথাও কোথাও চোরাবালি তো রয়েছেই। হাতের লাঠিগুলো তখন কাজে লাগছিল খুবই। আমাদের বলা হয়েছিল প্রায় ৩ ঘন্টা হাঁটতে হবে। কিন্তু আমরা প্রায় ৪ ঘন্টা হেঁটেছি। এরই মধ্যে পেছন থেকে একটি টিম আমাদের ক্রস করে সামনে চলে গেছে। আর অসংখ্য টিম ফিরে যাচ্ছে হাম হাম দেখে। ঝিরিপথে মাঝে মধ্যেই অনেক বেশি কাঁটাযুক্ত পানি থাকায় কিংবা বাঁশবন মাথা নুইয়ে রাস্তা ব্লক করায় পাহাড়ের পাশ বেয়ে পার হতে হচ্ছিল। পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি ৯৯% হলেও সবাই এগিয়ে যাচ্ছিলাম সম্মুখপানে। এরই মধ্যে এরকম এক জায়গায় গিয়ে আমি আর পা উপরে উঠাতে পারছিলাম না। পেছন থেকে গাইড বেচারাও যে আমাকে সাহায্য করবে তারও উপায় নেই। সে বলল লাঠি দিয়ে নিচে ভর দিতে। লাঠি গেল হাত থেকে ফসকে। দু’চোখে অন্ধকার দেখলাম। এবার নিচে পড়ে যাওয়ার ভয়ই শুধু জাগলো না জেগে উঠলো মৃত্যু ভয়। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করলাম। চোখ বন্ধ করে সামনের দিকে হাত বাড়ালাম। এক খন্ড বনলতায় হাত পড়তেই তা আঁকড়ে ধরে ঝুলে পড়লাম নিচে। লতা ধরেছি না সাপ ধরেছি তা টের পাওয়ার আগেই আল্লাহর ইচ্ছায় পার হয়ে গেলাম ভয়ানক জায়গাটি।

ভাবছিলাম এই বুঝি শেষ হয়ে যাবে পথ। কিন্তু না, আরো কিছুদূর হাঁটার পর সামনে পেলাম একটি উঁচু টিলা। টিমের অনেকেই রসিকতা করে বলল এই তো এভারেস্ট। কামরুজ্জমান তায়েফ তো ঘোষণা দিয়েই দিল যে, মুসা ইব্রাহিম যদি এভারেস্ট জয় করতে পারে তাহলে সে তুলনায় তো এটা কিছুই না। মনের মধ্যে এ্যাডভেঞ্চার দানা বাঁধতে লাগলো আবারো। শক্ত হাতে লাঠিতে ভর দিয়ে সবাই উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। অনেক কষ্টে উঁচু টিলায় ওঠার সময় ভেবেছিলাম এখানে উঠলেই বুঝি হাম হাম দেখা যাবে । কিন্তু সেখান থেকে আরো কিছুদূর হাঁটার পর বিপরীত দিক থেকে আসা এক টিমের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম এখনও দেড় ঘন্টা পথ বাকি। তারা আমাদের আরো দ্রুত হাঁটার পরামর্শ দিল। বলল, সন্ধ্যা হয়ে গেলে ফিরতে পারবেন না। কেউ কেউ বলল, টর্চ লাইট সঙ্গে না থাকলে সামনে বাড়ানো ঠিক হবে না। কারণ আপনাদের ফিরতে রাত হবেই। বড় দেরি করে এসেছেন। মনের মধ্যে অজানা আশংকা জেগে উঠলেও কেউ পিছপা হলাম না। এবার নামতে হলো নিচের দিকে যেভাবে উপরে উঠেছিলাম। আবারও দুই পাহাড়ের মাঝখানের ঝিরি পথ দিয়ে হাঁটছিলাম। এখানকার পানি অনেক ঠান্ডা মনে হলো। সূর্যের উত্তাপ আর হাঁটার চাপে ইতোপূর্বেকার প্রচন্ড গরমের বিপরীতে ঠান্ডা পানির ছোঁয়ায় বেশ আরাম বোধ করছিলাম। কিছু দূর হাঁটার পর আবারও একটি উঁচু টিলায় উঠতে হলো। এবারেরটা উঠতে গিয়ে মনে হলো এভারেস্টও বোধ হয় এত উঁচু নয়। শেষ মুহূর্তে আমার পা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। টিলার উপর কোন মতে উঠেই মাটিতে বসে পড়লাম। সবার পেছনে ছিলাম তবুও সবাই ফলো করছিল আমাকে। আমার দেখাদেখি সবাই মাটিতে বসে পড়লো। সালেম অনুমতি চাইল নাস্তা বিতরণের। কিছু শুকনো খাবার আর ফল নিয়েছিলাম সাথে। এছাড়া প্রত্যেকে ব্যক্তিগতভাবে কিছু খাবার নিয়েছিল। বললাম এখানে না, আরো সামনে গিয়ে খাবো। তবে এখানে একটু পানি পান করা যেতে পারে। বলা মাত্রই প্রত্যেকের পানির বোতলে ওরস্যালাইন ঢেলে দেওয়া হল। এটা পূর্বপরিকল্পিতই ছিল। ওরস্যালাইনযুক্ত পানি পানের পর সবাই শরীরে আবার তেজ ফিরে পেলাম। শুরু হলো আবারও হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে একসময় মনে হলো আসলে বোধ হয় হাম হাম টাম টাম নামে কোন ঝর্ণা ধারাই নেই এ জঙ্গলে। সম্ভবত এটা কোন গুজব! হাম হাম নাম দিয়ে কোম্পানিও করে ফেললাম। এত কষ্ট করে দেখতে এলাম। কিন্তু কোথায় সে হাম হাম। অনেকে তওবা করছিল হাঁটতে হাঁটতে আর জীবনে কভু হাম হামের নাম মুখেও আনবে না । এরই মধ্যে আরেকটি পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে হলো। তার কিছুক্ষণ পর আমরা একটা ছোট্ট গিরিপথের মধ্যে গিয়ে পড়লাম। পথের সামনে পেছনে খোলা। উপর দিকে গহীন বনের বিচিত্র গাছ গাছালির আচ্ছাদন। দুই পাশে পাথর হয়ে যাওয়া পাহাড়। এগুলো মাটি না পাথর নাকি গাছের শিকড় বুঝবার কোন উপায় নেই। অসাধারণ অনন্য মহান আল্লাহর এই সৃষ্টি দেখে ‘সুবহানাল্লাহ’ না পড়ে থাকতে পারলাম না।

বিপরীত দিক থেকে আসা দু একজন ভাই আপনা আপনি বললেন, যান ভাই দেখে প্রাণ জুড়ান গিয়ে। আর মাত্র কয়েক মিনিটের পথ! এতক্ষণে মনে নতুন করে আশার আলো জাগ্রত হলো। ভুলে গেলাম পেছনের কষ্ট। মিনিট বিশেক হাঁটলাম নতুন করে সঞ্চারিত এই স্বপ্নে বিভোর হয়ে। এ স্বপ্ন হাম হাম জলপ্রপাতের, এ স্বপ্ন অজানাকে জানার, এ স্বপ্ন বুনো ঝর্ণাকে খুঁজে পাওয়ার। এই তো সেই ঝর্ণা যাকে দেখতে এতটা পথ হেঁটে এসেছি। সত্যি সত্যি মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল।

সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো ছবি তোলা আর ঝর্ণার স্বচ্ছ পানিতে গোসল করায়। অবশেষে সবাইকে ডেকে নিলাম। হালকা নাস্তা করতে বসলাম সবাইকে নিয়ে। সৈয়দ সালেম টিফিন বক্স খুলে আমন্ত্রণ জানালো সবাইকে। এক বাটি রুটি আর এক বাটি মাংস। সবাই এক পিস রুটি ও এক পিস মাংস খেয়ে নিলাম। সাথে নিয়ে যাওয়া কেক, বিস্কুট, আপেল ইত্যাদিও খেলাম। তারপর দেরি না করে ফিরতি পথে হাঁটা শুরু। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার পূর্বেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পেরিয়ে যেতে হবে। কোন মতে পার হলাম কঠিন দুর্গম ঝিরিপথ। তারপরই আঁধার ঘনিয়ে এল। টর্চ লাইটের আলোর পাশাপাশি আকাশের চাঁদের আলোতে হেঁটে আসতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। অবশেষে রাত ৮টার সময় বের হলাম গহীন অরণ্য থেকে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের আমাজন রাতারগুল । কামরুল আলম
Design & Developed by  paprhihost